WB ICDS Recruitment 2025: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য নতুন আশার আলো!
পশ্চিমবঙ্গের ICDS (ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস) খাতে অবশেষে সমাধান মিলল দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে চলা নিয়োগ জটিলতার। কলকাতা হাইকোর্টের সাম্প্রতিক এক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যে প্রায় ১,৭০০টি সুপারভাইজার পদে নিয়োগের পথ উন্মুক্ত হলো। এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরেছে হাজারো চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে, যারা শিশু কল্যাণমূলক এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য বহু বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলেন। (WB ICDS Recruitment 2025)
আরও পড়ুন:–Pm Kisan 19th Installment: কৃষকদের ১৯ নম্বর কিস্তির টাকা কবে দেবে? Farmers Big News
Table of Contents
বিরোধের শিকড়: সময়রেখা ও বিলম্বের ইতিহাস
১৯৯৮ সালে শেষবারের মতো পশ্চিমবঙ্গে ICDS সুপারভাইজার নিয়োগ হয়েছিল। এরপর দুই দশক ধরে প্রশাসনিক জটিলতা ও নীতিগত দ্বন্দ্বের কারণে এই পদগুলো শূন্য থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ শিশু সুরক্ষা পরিষেবা। ২০১৯ সালে রাজ্য সরকার ৩,৪৫৮টি শূন্যপদে নিয়োগের ঘোষণা করলেও এটি কেন্দ্রীয় নির্দেশিকাবিরোধী হওয়ায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়।(WB ICDS Recruitment 2025)
মূল বিবাদটি শুরু হয় ২০১৫ সালের কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা নিয়ে, যেখানে ICDS সুপারভাইজার পদের ৫০% অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার মাত্র ৪২২টি পদ (১২%) তাদের জন্য সংরক্ষিত রেখে বাকি ৩,০৩৬টি পদে সরাসরি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা এবং আদালতের দ্বারস্থ হন।(WB ICDS Recruitment 2025)

রাজ্য বনাম কেন্দ্র: নীতির সংঘাত
কেন্দ্রীয় সরকারের ২০১৫ সালের নীতি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অভিজ্ঞতাকে মূল্য দিয়ে তাদের সুপারভাইজার পদে উন্নীত করার ওপর জোর দিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৭৫% পদে নতুন নিয়োগের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, যার যুক্তি হিসেবে বলা হয় “তাজা প্রাণশক্তি” আনার প্রয়োজনীয়তা। সমালোচকরা এই সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দেন, বিশেষত গ্রামীণ মহিলা কর্মীদের অধিকার উপেক্ষার অভিযোগ তোলেন।
আরও পড়ুন:–Banglar Bari 2nd Installment: বাংলার বাড়ি প্রকল্পের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা কবে দেবে? Big News Bangla Awas Yojana!
আদালতের লড়াই: রায়ে মোড় বদল
২০১৯ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে একের পর এক মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায় রায় দেন যে, ৫০% পদ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। তবে রাজ্য সরকার রায় মানতে অস্বীকার করায় ২০২৪ সালে মামলাটি পুনর্বিবেচনার জন্য বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার বেঞ্চে যায়। আদালত পূর্বের রায় বহাল রাখেন এবং রাজ্যকে ৩,৪৫৮টি পদের অর্ধেক (১,৭২৯টি) অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের নির্দেশ দেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: কী এখন?
ই রায় শুধু অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ন্যায্য দাবিকেই স্বীকৃতি দেয়নি, সরকারি নিয়োগে জবাবদিহিতারও সংকেত দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়িত হলে ICDS-এর মতো প্রকল্পের কার্যকারিতা বাড়বে, যা অপুষ্টি দূরীকরণ, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এবং মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, অনেক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর অবসর আসন্ন হওয়ায় সময়মতো পদোন্নতি তরুণ প্রার্থীদেরও এই খাতে আকৃষ্ট করতে পারে।
নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে গিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে এখন চ্যালেঞ্জ হলো স্বচ্ছতা বজায় রাখা। হাজারো প্রার্থীর জন্য এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান এনেছে, কিন্তু বাস্তবায়নের গতির ওপর নির্ভর করছে পশ্চিমবঙ্গের শিশু সুরক্ষা পরিকাঠামোর ভবিষ্যৎ। এখন নজর প্রশাসনের দিকে—যাতে নীতিগত বিজয় বাস্তবেও প্রতিফলিত হয়।